১) আস্সালামুআলাইকুম, আমি ডাঃ ইফতেখার, আপনার রোগ নিয়ে আপনার সাথে কথা বলব।
২) আপনি কি আপনার রোগের নাম জানেন? (হুম জানি), ঠিক আছে ধন্যবাদ, আপনার রোগের নাম Parkinson's disease, এর কোন বাংলা নাম নেই।
৩) আমাদের মস্তিষ্ক বিভিন্ন ধরনের রস নিঃসরন করে শরীরের সকল কাজকর্ম নিয়ন্ত্রন করে থাকে, মস্তিষ্কে যখন ডোপামিন নামক একটি রস তৈরি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তখন এ রোগ হয়। অধিকাংশ (৮০%) ক্ষেত্রেই এ রোগের কারন জানা যায় না, আবার দেখা যায় যে বিভিন্ন ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়া (যেমন মানুসিক রোগের ঔষধ, খিঁচুনি রোগের ঔষধ), স্ট্র্রোক, ব্রেইনের বিশেষ কিছু রোগে এ রোগ হতে পারে।
৪) তাই আমরা ব্রেইনের এম.আর.আই সহ কিছু পরীক্ষা করে দেখব যে কোন কারন খুঁজে পাওয়া যায় কিনা, কারন পাওয়া গেলে কারনের চিকিৎসা দিলে রোগটি সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫) এ রোগের জন্য হাত-পা কাপুনি, হাত-পা নাড়াচাড়ায় ধীর গতি হওয়া, মন খারাপ হওয়া, ঘুমের সমস্যা সহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।
৬) নির্দিষ্ট কারন না পাওয়া গেলে এ রোগ নিরাময় করার মত কোন চিকিৎসা নেই, তবে এ রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রনের চিকিৎসা রয়েছে। তবে আমরা ঔষধ ছাড়া যেন রোগটিকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায় তার জন্য চেষ্টা করব, কেননা দীর্ঘ দিন এ রোগের ঔষধ খেলে একসময় ঔষধের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে, কাজেই যখন এ রোগের বিভিন্ন উপসর্গের কারনে আপনার চলাফেরায় অসুবিধা হবে তখনই আমরা ঔষধ শুরু করব।
৭) অন্যদিকে চিকিৎসা না নিলে এ রোগ তীব্র হয়ে জীবন দূর্বিষহ করে ফেলতে পারে।
৮) এ রোগের চিকিৎসার জন্য আমরা ৩ ধরনের পন্থা অবলম্বন করে থাকি, এক ঔষধ সেবন করা, দুই ফিজিওথেরাপি নেওয়া এবং জীবন-যাত্রার কিছু নিয়ম মেনে চলা, তিন সার্জারি।
৯) আপনাকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিতে হবে, তাছাড়া কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে, যেমন নিয়মিত ব্যয়াম করা, ধূমপান পরিহার করা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন না করা ইত্যাদি।
১০) ঔষধ বিভিন্ন রকম রয়েছে, প্রথমে আমরা Levodopa নামক একটা ঔষধ কম ডোজে শুরু করব, রোগ নিয়ন্ত্রন না হওয়া পর্যন্ত ডোজ বাড়াব, কাজ না করলে আমরা নতুন ঔষধ যোগ করতে পারি যেমন, Ropinirole, Pramipexole, Selegiline, Amantadine, entacapone ইত্যাদি।
১১) ঔষধের জন্য বিভিন্ন পার্শপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন Levodopa র জন্য বমিভাব, মুখমন্ডলের মাংস পেশি কাঁপুনি, মন খারাপ হওয়া, Selegiline এর জন্য কাঁপুনি, entacapone এর জন্য বমিভাব, ডায়রিয়া, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি।
১২) তাছাড়া দীর্ঘ দিন Levodopa খাওয়ার পর এর কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে ঔষধের মাত্রা পরিবর্তন বা অন্য ঔষধ যোগ করা লাগতে পারে।
১৩) সার্জারি কেবল তখনই প্রযোজ্য হবে যখন কোনভাবেই ঔষধ দিয়ে রোগটি নিয়ন্ত্রন সম্ভব হচ্ছে না।
১৪) রোগের অবস্থা বুঝে ঔষধের মাত্রা পরিবর্তন করতে এবং ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা নির্নয় করতে আপনাকে নিয়মিত ফলোআপে আসতে হবে।
১৫) ফলোআপের সময় কিছু পরীক্ষা যেমন, রক্তের সিবিসি, আর.বি.এস, কিডনির মার্কার ইত্যাদি করা লাগতে পারে।
১৬) সুতরাং দেখা যাচ্ছে আপনি যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলেন, তাহলে প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন।
১৭) আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন।
১৮) আপনার আর কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
১৯) ধন্যবাদ।
================================== RheumaLife =================================
=================================== iCarePG ===================================
No comments:
Post a Comment