Tuesday, April 25, 2017

MPA (Microscopic polyangiitis)

MPA (Microscopic polyangiitis) তে আক্রান্ত রুগীদের কিছু কমন প্রশ্ন এবং তার উত্তরঃ

প্রশ্নঃ এটা কী রোগ?

উঃ এটা ভাসকুলাইটিস (রক্তনালীর প্রদাহ) জনিত এক প্রকার বাত রোগ। রোগটির নাম মাইক্রোসকোপিক পলিএনজাইটিস (Microscopic polyangiitis), এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কিত একটি রোগ।
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কাজ হল: বাইরে থেকে কোন জীবানু শরীরে প্রবেশ করলে তাকে মেরে ফেলা, কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন শরীরের বিরুদ্ধেই কাজ করা শুরু করে তখন এ জাতীয় রোগ হয়। যেমন, ধরেন আপনি বাসায় দারোয়ান রাখলেন আপনাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য, কিন্তু দারোয়ান যদি নিজেই আপনার সর্বনাশ করতে আরম্ভ করে, তাহলে যেই পরিস্থিতি হবে, এই রোগটা অনেকটা সেরকম।

প্রশ্নঃ এই রোগের উপসর্গ কী?

উঃ এ রোগে জ্বর হওয়া, শরীর নিস্তেজ লাগা, নাক দিয়ে রক্ত বা পুঁজ পড়া, মুখের ভিতর অস্বাভাবিক পরিমান ঘা হওয়া, কাশির সাথে রক্ত পড়া, কিডনিতে গ্লুমেরুলোনেফ্রাইটিস নামক অসুখ হয়ে পশ্রাবের সাথে রক্ত এবং প্রোটিন নির্গত হওয়া, শরীরের একপাশ অবস হয়ে যাওয়া (স্ট্রোক), চামড়ায় লাল লাল দাগ পড়া, গিড়া ব্যথা হওয়া, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।

প্রশ্নঃ রোগটা কী ভাল হবে?

উঃ আমাদের শরীরের কিছু কিছু রোগ আছে যা এক কোর্স ঔষধ খেলেই সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যায়। আবার কিছু রোগ আছে, যেমন ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেশার, ইত্যাদি, যা সবসময় ঔষধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তেমনি এ রোগটি সম্পুর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়, তবে এ রোগ দাবিয়ে রাখার জন্য চিকিৎসা আছে।

প্রশ্নঃ যদি চিকিৎসা না নেই?

উঃ চিকিৎসা না নিলে রোগে বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে যেমন, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, প্রচন্ড রক্তবমি বা কাশি অথবা স্ট্রোক করে মারা যাওয়া ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ এ রোগের জন্য কোন ডাক্তার দেখালে ভাল হবে?

উঃ রিউমাটোলজী (Rheumatology) তে এমডি (MD) অথবা এফসিপিএস (FCPS) করা যে কোন ডাক্তার আপনি দেখাতে পারেন। আর কিডনির সমস্যায় প্রয়োজনে নেফ্রোলজী (Nephrology)
তে এমডি (MD) অথবা এফসিপিএস (FCPS) করা যে কোন ডাক্তার দেখানো লাগতে পারে।

প্রশ্নঃ রোগটির চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু বলেন-

উঃ এ রোগের চিকিৎসার ২টি দিক আছে, এক জীবন-যাত্রার কিছু নিয়ম পরিবর্তন করা, দুই ঔষধ সেবন।

নিয়মকানুনগুলো হলঃ
- নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে।
- ধুমপান বাদ দিতে হবে।

ঔষধ ব্যবহার করার সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। আমরা B-Vas নামক একটি তালিকা অনুসরন করে রোগটি কোন অবস্থায় আছে তা নির্ণয় করে থাকি। রোগটি শরীরে ৪ রকম অবস্থায় থাকতে পরে:
১) মারাত্মক খারাপ অবস্থা (Severe flare)
২) অল্প খারাপ অবস্থা (Mild flare)
৩) স্থায়ী অবস্থা (Persistent disease)
৪) সুপ্ত অবস্থা (Remission)

- মারাত্মক খারাপ অবস্থায় আমাদের হাতে অস্ত্র ২রকম আছে, রিটুক্সিমেব অথবা সাইক্লোফসফামাইড, সাথে হাই ডোজ প্রেডনিসোলন।

- অল্প খারাপ অবস্থা এবং স্থায়ী অবস্থার ঔষধ হল লো ডোজ প্রেডনিসোলন এবং এম.এম.এফ।

- আর সুপ্ত অবস্থার চিকিৎসা হল মেথট্রিক্সেট, এজাথাইয়োপ্রিন, লো ডোজ প্রেডনিসোলন ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ কতদিন পরপর ডাক্তার দেখাতে হবে?

রোগ বেড়ে গেলে তৎক্ষণাত ডাক্তার দেখাতে হবে, আর রোগ যদি সুপ্ত অবস্থায়ও থাকে, তবুও ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করতে ডাক্তার দেখাতে হবে। প্রেডনিসোলন খুবই ঝুঁকিপুর্ণ একটি ঔষধ, এর ফলে হাড় ক্ষয় হওয়া, কিডনি, অন্ত্র, লিভারের সমস্যা হওয়া, রক্ত কমে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে; তাই আপনার ক্ষেত্রে কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা নির্নয় করতে আপনাকে নিয়মিত ফলোআপে আসতে হবে। শুরুর দিকে ২ সপ্তাহ পরপর, তারপর ১ মাস পরপর, আর রোগের মাত্রা কমে গেলে ৩মাস পরপর ফলোআপে আসতে হবে। ফলোআপের সময় কিছু পরীক্ষা যেমন, রক্তের সিবিসি, কিডনির মার্কার, লিভারের মার্কার ইত্যাদি করে চিকিৎসককে রিপোর্ট দেখাতে হবে।

প্রশ্নঃ টিকা না কি নিতে হবে শুনলাম?

এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রন করতে আমরা যে ঔষধগুলো দিয়ে থাকি তাদের কাজ হল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া। এর ফলে বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই আপনাকে নিয়মিত কিছু কমন সংক্রামক ব্যধির টিকা নিতে হবে।

প্রশ্নঃ ঔষধ খেলে কি সবসময় ভাল থাকব?

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঔষধ খাওয়া অবস্থায়ও এ রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধের মাত্রা পরিবর্তন করা লাগতে পারে।


================================== RheumaLife =================================
=================================== iCarePG ===================================

No comments:

Post a Comment