Saturday, April 1, 2017

এস. এল. ই. (SLE)

SLE তে আক্রান্ত রুগীদের কিছু কমন প্রশ্ন এবং তার উত্তরঃ

প্রশ্নঃ এটা কী রোগ?

উঃ এটা এক প্রকার বাত রোগ। রোগটির নাম এস. এল. ই. (SLE), অর্থাৎ সিস্টেমিক লুপাস ইরাইদেমেটোসাস (Systemic Lupus Erythematosus), এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কিত একটি রোগ।
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কাজ হল: বাইরে থেকে কোন জীবানু শরীরে প্রবেশ করলে তাকে মেরে ফেলা, কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন শরীরের বিরুদ্ধেই কাজ করা শুরু করে তখন এ জাতীয় রোগ হয়। যেমন, ধরেন আপনি বাসায় দারোয়ান রাখলেন আপনাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য, কিন্তু দারোয়ান যদি নিজেই আপনার সর্বনাশ করতে আরম্ভ করে, তাহলে যেই পরিস্থিতি হবে, এই রোগটা অনেকটা সেরকম।

প্রশ্নঃ এই রোগের উপসর্গ কী?

উঃ এ রোগের জন্য গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা হওয়া, রোদে গেলে ত্বক জ্বালাপোড়া করা, চুল পড়া, মুখের ভিতর ঘা হওয়া, পশ্রাবের সঙ্গে অতিরিক্ত আমিষ ক্ষয় হওয়া, ফুসফুসে, হৃদপিন্ডে বা পেটে পানি জমা ইত্যাদি বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।

প্রশ্নঃ রোগটা কী ভাল হবে?

উঃ আমাদের শরীরের কিছু কিছু রোগ আছে যা এক কোর্স ঔষধ খেলেই সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যায়। আবার কিছু রোগ আছে, যেমন ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেশার, ইত্যাদি, যা সবসময় ঔষধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তেমনি এস. এল. ই. রোগটি সম্পুর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়, তবে এ রোগ দাবিয়ে রাখার জন্য চিকিৎসা আছে। উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে এ রোগের রুগীদের শতকরা ৯৫ ভাগই সাধারন মানুষের মতই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম।

প্রশ্নঃ যদি চিকিৎসা না নেই?

উঃ চিকিৎসা না নিলে এ রোগ মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন কিডনি, ফুসফুস, ব্রেইন সহ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে পারে এবং আপনি মারাও যেতে পারেন!

প্রশ্নঃ এ রোগের জন্য কোন ডাক্তার দেখালে ভাল হবে?

উঃ রিউমাটোলজী (Rheumatology) তে এমডি (MD) অথবা এফসিপিএস (FCPS) করা যে কোন ডাক্তার আপনি দেখাতে পারেন।

প্রশ্নঃ রোগটির চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু বলেন-

উঃ এ রোগের চিকিৎসার ২টি দিক আছে, এক জীবন-যাত্রার কিছু নিয়ম পরিবর্তন করা, দুই ঔষধ সেবন।

নিয়মকানুনগুলো হলঃ
- রোদ থেকে বেঁচে থাকতে হবে, সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।
- ধুমপান বাদ দিতে হবে।
- জরায়ুর ভিতর শলাকা প্রবেশ করিয়ে যে জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা বাদ দিতে হবে ইত্যাদি।

ঔষধ আমরা ২ ধরনের  দিয়ে থাকি, উপসর্গ নিরাময়ের জন্য এবং রোগের প্রক্রিয়াকে দাবিয়ে রাখার জন্য। ব্যথার জন্য ব্যথানাশক, যেমন NSAIDs, আর বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যা অনুযায়ী ঔষধ। অন্যদিকে রোগের প্রক্রিয়াকে দাবিয়ে রাখার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এমন ঔষধ ব্যবহার করা হয়, যেমন Hydroxychloroquine, Prednisolone, Azathioprine, Ciclosporin ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ ব্যাথার ঔষধ খেলে তো শুনেছি কিডনী নষ্ট হয়ে যায়!

ব্যাথার ঔষধে কিডনির কমনেস্ট যে সমস্যা হয়, তা হল একিউট ইন্টারস্টেশিয়াল নেফ্রাইটিস, আপনি ইন্টারনেট ঘাটলে দেখতে পাবেন যে ইন্টারস্টেশিয়াল নেফ্রাইটিস ব্যাথার ঔষধের জন্য যতটা না হয়, তার চেয়ে বেশি হয় বিভিন্ন এন্টিবায়োটিকের জন্য, এমন কি গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের জন্য। আর এ সমস্যা যার হয় তার প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই হয়। এবং এটি সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। আর সবাই কিডনির যে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে তা হল "সি. কে. ডি.", বাংলাদেশে যার ১ নম্বর কারন গ্লোমেরিউলোনেফ্রাইটিস, ২ নম্বর কারন ডায়বেটিস, ৩ নম্বর কারন উচ্চ রক্ত চাপ। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে ব্যাথার ঔষধ শতকরা মাত্র ১-৩ ভাগ মানুষের কিডনির সমস্যা করে, কাজেই আপনি কি সেই ৩ ভাগের ভিতর পরবেন? নাকি বাকি ৯৭ ভাগের ভিতর পরবেন? তা আপনার ভাগ্য। তবে আপনি যদি সেই ৩ ভাগের ভিতর পরেও থাকেন তবুও ভয় পাওয়ার কারন নেই, কেননা আপনার কিডনির কোন সমস্যা হচ্ছে কি না তা লক্ষ্য রাখতে আমরা নিয়মিত আপনাকে কিডনির মার্কার করে ফলোআপে আসতে বলব।

আর কিডনি ছাড়াও এসকল ঔষুধে অন্ত্র, লিভারের সমস্যা হওয়া, রক্ত কমে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে; তাই আপনার ক্ষেত্রে কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা নির্নয় করতে আপনাকে নিয়মিত ফলোআপে আসতে হবে। শুরুর দিকে ২ সপ্তাহ পরপর, তারপর ১ মাস পরপর, আর রোগের মাত্রা কমে গেলে ৩মাস পরপর ফলোআপে আসতে হবে। ফলোআপের সময় কিছু পরীক্ষা যেমন, রক্তের সিবিসি, কিডনির মার্কার, লিভারের মার্কার ইত্যাদি করে চিকিৎসককে রিপোর্ট দেখাতে হবে।

প্রশ্নঃ টিকা না কি নিতে হবে শুনলাম?

এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রন করতে আমারা যে ঔষধগুলো দিয়ে থাকি তাদের কাজ হল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া। এর ফলে বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই আপনাকে নিয়মিত কিছু কমন সংক্রামক ব্যধির টিকা নিতে হবে।

প্রশ্নঃ ঔষধ খেলে কি সবসময় ভাল থাকব?

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঔষধ খাওয়া অবস্থায়ও এ রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধের মাত্রা পরিবর্তন করা লাগতে পারে।

আর বাচ্চা নিতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, এ সম্পর্কে বিস্তারিত পরে জানাব।


================================== RheumaLife =================================

No comments:

Post a Comment