Monday, May 1, 2017

Systemic Sclerosis (Scleroderma)


সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
ডা: ইফতেখার হোসেন (বাঁধন)

প্রশ্নঃ সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস কী?
উঃ সিস্টেমিক স্ক্লেরোসিস (Systemic sclerosis) বা স্ক্লেরোডার্মা (Scleroderma) এক প্রকার বাত রোগ।
স্ক্লেরো” (sclero) শব্দের অর্থ শক্ত, “ডার্মা” (derma) শব্দের অর্থ ত্বক বা চামড়া, “স্ক্লেরোডার্মা” (Scleroderma) শব্দের অর্থ “শক্ত ত্বক বা চামড়া”।
এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাথে সম্পর্ক-যুক্ত একটি রোগ।

প্রশ্নঃ রোগটি কেন হয়?
আমাদের শরীরের নিজস্ব একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, এর মূল কাজ হল – শরীরকে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। কিন্তু এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে এবং নিজেই নিজের শরীরকে আক্রমণ করে বসে তখন এ জাতীয় রোগ হয়। যেমন, ধরেন আপনি বাসায় দারোয়ান রাখলেন আপনাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য, কিন্তু দারোয়ান যদি নিজেই আপনার সর্বনাশ করতে আরম্ভ করে, তাহলে যেই পরিস্থিতি হবে, এই রোগটা অনেকটা সেরকম।
ত্বকের ২টি স্তর রয়েছে: উপরের স্তরকে বলে এপিডার্মিস, নিচের স্তরকে বলে ডার্মিস এই রোগে ডার্মিসে কোলাজেন নামক একটি আমিষ অধিক মাত্রায় জমা হওয়ার ফলে ত্বক মোটা এবং শক্ত হওয়া শুরু করে

প্রশ্নঃ এই রোগের উপসর্গ কী?
উঃ এ রোগের জন্য প্রথম দিকে হাত ও পায়ের পাতা এবং উপরের তালুসহ আঙ্গুলসমূহ ফুলে যায়, এরপর চামড়া ধীরে ধীরে মোটা এবং শক্ত হওয়া শুরু করে
কারও কারও ক্ষেত্রে এটি হাতের কনুই এবং পায়ের হাটু পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতে পারে, কারও কারও ক্ষেত্রে এটি কনুই ও হাটুর উপরিভাগসহ মুখমন্ডল, বুক এবং পিঠের চামড়া আক্রান্ত করতে পারে
পরবর্তীতে আঙ্গুলের মাথাগুলো চিকন হয়ে যেতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে আঙ্গুলের মাথায় ঘা হতে পারে
রোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ঠান্ডা পানি বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় অথবা মানসিক বিষন্নতায় আঙ্গুলসমূহ নীল এবং ফ্যাকাশে বর্ণ ধারন করে
কারও কারও ক্ষেত্রে এ রোগ ত্বকের পাশাপাশি অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রমণ করতে পারে, যেমন: ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, কীডনি, অন্ত্র ইত্যাদিগিড়ায় গিড়ায় ব্যথা হতে পারেফুসফুস আক্রান্ত হলে এ রোগের রুগীরা সাধারনত অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠেন, সেই সাথে খুসখুসে কাশিও হতে পারেখাদ্যনালী এবং পাকস্থলি আক্রান্ত হলে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে, গলায় খাবার উঠে আসতে পারে ইত্যাদি
আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এ রোগ ত্বক আক্রমণ না করেও ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত করতে পারে

প্রশ্নঃ রোগটা কি ভাল হবে?
উঃ আমাদের শরীরের কিছু কিছু রোগ আছে যা এক কোর্স ঔষধ খেলেই সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যায়, যেমনঃ নিউমোনিয়া, যক্ষা ইত্যাদি।
আবার কিছু কিছু রোগ আছে, যেমন ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ইত্যাদি, যা সবসময় ঔষধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।
তেমনি এ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব নয়, তবে আপনার কষ্ট লাঘব করার জন্য এবং রোগটিকে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে না হয় এ রোগ সুস্থ হওয়ার কোন চিকিৎসা নেই, বাইরে কোথাও গেলে কি লাভ হবে?
উঃ পৃথিবীর কোথাও এ রোগ নিরাময়ের চিকিৎসা নেই, কোথাও এরূপ চিকিৎসা আবিষ্কার হলে অল্প সময়ের মধ্যেই তা বাংলাদেশেও চলে আসবে।

প্রশ্নঃ এ রোগের জন্য কোন ডাক্তার দেখালে ভাল হবে?
উঃ এ রোগের চিকিৎসক হল রিউমাটোলজিস্ট, রিউমাটোলজী (Rheumatology) বিষয়ের উপর দক্ষতা আছে এমন যে কোন ডাক্তার আপনি দেখাতে পারেন।

প্রশ্নঃ রোগটির চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু বলুন-
উঃ এ রোগের চিকিৎসার ২টি দিক আছে, এক - জীবন-যাত্রার কিছু নিয়ম বা অভ্যাসের পরিবর্তন করা, দুই - ঔষধ সেবন।

নিয়মকানুনগুলো হলঃ
u  ধুমপান বাদ দিতে হবে
u  ত্বক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, ত্বক আর্দ্র রাখতে ভ্যাসলিন অথবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে
u  আঙ্গুলের রঙের পরিবর্তন রোধ করতে:
o   ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে
o   ঠান্ডা কোনকিছু হাতে স্পর্শ করা যাবে না
o   প্রয়োজনে হাতে গ্লোস পড়তে হবে
o   মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করতে হবে
o   এই রোগের চিকিৎসককে অবগত না করে অন্য কোন ঔষধ সেবন করা যাবে না
u  গলায় খাবার উঠে আসলে:
o   উঁচু বালিশে শুতে হবে
o   খাওয়ার ১ ঘন্টার ভিতর শোয়া পরিহার করতে হবে
o   প্রয়োজনে অল্প অল্প করে বারে বারে খেতে হবে
o   চা-কফি, চকলেট জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে
u  নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে

আর কী কী ঔষধ দেওয়া হবে, তা নির্ভর করে কোন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়েছে তার উপর, আঙ্গুলের রঙ পরিবর্তন হলে Nifedipine, Amlodipine, Aspirin, Sildenafil, Tadalafil, Bosentan, Iloprost ইত্যাদি লাগতে পারে ব্যথার জন্য ব্যথানাশক, আর যদি গিড়া ব্যথা অধিক প্রকট থাকে তাহলে তার প্রক্রিয়াকে দাবিয়ে রাখার জন্য MTX দেওয়া লাগতে পারে। যদি শ্বাসকষ্ট অধিক প্রকট থাকে তাহলে তার প্রক্রিয়াকে দাবিয়ে রাখার জন্য Steroid, Cyclophosphamide, MMF কিংবা Rituximab লাগতে পারে। বুক জ্বালাপোড়া, গলায় খাবার উঠে আসার জন্য এন্টিআলসারেন্ট, Domperidone ইত্যাদি লাগতে পারে। কীডনি-জনিত সমস্যার কারনে ব্লাড-প্রেশার বেড়ে গেলে ACEi প্রথম সারির ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্নঃ এই রোগের রুগীদেরকে ডাক্তাররা ২-৩ মাস পরপর ফলোআপে আসতে বলেন কেন?
উঃ ঔষধের জন্য কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয়- যেমন কিডনি, অন্ত্র, লিভারের সমস্যা হওয়া, রক্ত কমে যাওয়া ইত্যাদি। আপনার ক্ষেত্রে কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করতে এবং রোগের কারনে আপনার নতুন কোন সমস্যা হচ্ছে কনা তা নির্ণয় করতে আপনাকে নিয়মিত ফলোআপে আসতে হবে। শুরুর দিকে ২ সপ্তাহ পরপর, তারপর ১ মাস পরপর, পরবর্তীতে মাস পরপর ফলোআপে আসতে হবে। ফলোআপের সময় কিছু পরীক্ষা যেমন, রক্তের সিবিসি, কিডনির মার্কার, লিভারের মার্কার, স্পাইরোমেট্রি ইত্যাদি করে চিকিৎসককে রিপোর্ট দেখাতে হবে।

প্রশ্নঃ এই রোগের রুগীদেরকে ডাক্তাররা টিকা নিতে বলেন কেন?
উঃ এই রোগে কিছু সংক্রামক ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়, তাছাড়া রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এমন ঔষধ ব্যবহার করতে হয়, সেক্ষেত্রেও সংক্রামক ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কাটা বেড়ে যায়
তাই নিয়মিত কিছু কমন সংক্রামক ব্যাধির টিকা নিতে হবে, যেমনঃ
o   পাঁচ বছর পরপর নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন
o   প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিন
o  হেপাটাইটিস বি ভ্যাক্সিন ইত্যাদি

প্রশ্নঃ এই রোগের রুগীরা কি বাচ্চা নিতে পারবেন?
উঃ অবশ্যই নিতে পারবেন, তবে বাচ্চা নিতে চাইলে আগে চিকিৎসককে অবহিত করতে হবেMTX বা MMF জাতীয় ঔষধ চললে তা বাচ্চা নেওয়ার ৩ মাস আগে বন্ধ করতে হবে। সুস্থ মহিলাদের তুলনায় এই রোগের রুগীদের মিসক্যারেজ বা অকাল গর্ভপাত হওয়ার সম্ভবনা কিছুটা বেশি থাকে। গর্ভকালীন সময়ে আঙ্গুলের রঙ পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা কমে যেতে পারে, কিন্তু বুক জ্বালাপোড়া বা গলায় খাবার উঠে আসা সংক্রান্ত সমস্যা বেড়ে যেতে পারে

--- ধন্যবাদ ---

================================== RheumaLife =================================
=================================== iCarePG ===================================

No comments:

Post a Comment