Thursday, April 27, 2017

SPA (Spondyloarthritis)

SPA (Spondyloarthritis) তে আক্রান্ত রুগীদের কিছু কমন প্রশ্ন এবং তার উত্তরঃ

প্রশ্নঃ এটা কী রোগ?

উঃ এটা এক প্রকার বাত রোগ। রোগটির নাম স্পন্ডাইলোআরথ্রাইটিস বা স্পন্ডাইলোআরথ্রোপ্যথী (Spondyloarthritis or spondyloarthropathy), এটি হাড় লিগামেন্টের প্রদাহ জনিত একটি রোগ।

এটি নির্দিষ্ট একটি রোগ নয়, এটাকে একটা ছাউনি বলতে পারেন, যার নিচে - টি রোগের যে কোন একটি রয়েছে, এরা হলঃ
- এনকাইলোসিং স্পন্ডাইলাইটিস (Ankylosing spondylitis)পিঠের দাড়া শক্ত হয়ে যাওয়া।
- রিয়েক্টিভ আরথ্রাইটিস (Reactive arthritis): অন্ত্রের বা মুত্রনালীর ইনফেকশনের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
- এক্সিয়াল স্পন্ডাইলোআরথ্রাইটিস (Axial spondyloarthritis)পিঠের দাড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
- পেরিফেরাল স্পন্ডাইলোআরথ্রাইটিস (Peripheral spondyloarthritis) পিঠের দাড়া ব্যতীত অন্যান্য গিড়া আক্রান্ত হলে।
- সোরিয়েটিক আরথ্রাইটিস (Psoriatic arthritis): আপনার বা আপনার পরিবারের কারো সোরিয়েসিস নামক চর্মরোগ থাকলে।

- এন্টারপ্যাথিক আরথ্রাইটিস (Enteropathic arthritis): এক প্রকার প্রদাহ জনিত রক্ত আমাশয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

আপনার ক্ষেত্রে যদি এগুলোর যে একটি নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে আপনার ডায়াগনোসিস তাই হবে, আর যদি নিশ্চিত না হওয়া যায়, তাহলে আপনাকে SPA এর আন্ডারে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে এই রোগের সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কাজ হল: বাইরে থেকে কোন জীবানু শরীরে প্রবেশ করলে তাকে মেরে ফেলা, কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন শরীরের বিরুদ্ধেই কাজ করা শুরু করে তখন জাতীয় রোগ হয়। যেমন, ধরেন আপনি বাসায় দারোয়ান রাখলেন আপনাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য, কিন্তু দারোয়ান যদি নিজেই আপনার সর্বনাশ করতে আরম্ভ করে, তাহলে যেই পরিস্থিতি হবে, এই রোগটা অনেকটা সেরকম।

প্রশ্নঃ এই রোগের উপসর্গ কী?

উঃ রোগে লিগামেন্ট যেখানে হাড়ের সাথে যুক্ত হয় সে জায়গায় ব্যথা হওয়া, পিঠের দাড়া শক্ত হয়ে যাওয়া, কোমড় বা ঘাড় ব্যথা করা, বিভিন্ন গিড়ায় ব্যথা হওয়া, শরীর নিস্তেজ লাগা ইত্যাদি বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।

প্রশ্নঃ রোগটা কী ভাল হবে?

উঃ আমাদের শরীরের কিছু কিছু রোগ আছে যা এক কোর্স ঔষধ খেলেই সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যায়। আবার কিছু রোগ আছে, যেমন ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেশার, ইত্যাদি, যা সবসময় ঔষধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। তেমনি রোগটি সম্পুর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়, তবে রোগ দাবিয়ে রাখার জন্য চিকিৎসা আছে। রোগের রুগীদের মধ্যে যাদের HLA-B27 পজিটিভ থাকে, তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদী উপসর্গ দেখা দেয়।

প্রশ্নঃ যদি চিকিৎসা না নেই?

উঃ চিকিৎসা না নিলেও কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে চলে আসতে পারে, কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক ব্যথা থাকতে পারে, আবার কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পিঠের দাড়া অনড় হয়ে যাওয়া সহ অন্যান্য মারাত্মক জটিলতা হতে পারে, যেমন, হৃদযন্ত্র ব্লক হয়ে যাওয়া, ফুসফুসে বা কিডনিতে দীর্ঘস্থায়ী অসুখ হওয়া ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ রোগের জন্য কোন ডাক্তার দেখালে ভাল হবে?

উঃ রিউমাটোলজী (Rheumatology) তে এমডি (MD) অথবা এফসিপিএস (FCPS) করা যে কোন ডাক্তার আপনি দেখাতে পারেন।

প্রশ্নঃ রোগটির চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু বলেন-

উঃ রোগের চিকিৎসার ২টি দিক আছে, এক জীবন-যাত্রার কিছু নিয়ম পরিবর্তন করা, দুই ঔষধ সেবন।

নিয়মকানুনগুলো হলঃ
- নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে।
- ধুমপান বাদ দিতে হবে।

কীভাবে ব্যয়াম করবেন, তা নিচের ভিডিওতে দেখতে পারেনঃ



আর ঔষধ আমরা ধরনের  দিয়ে থাকি, উপসর্গ নিরাময়ের জন্য এবং রোগের প্রক্রিয়াকে দাবিয়ে রাখার জন্য। ব্যথার জন্য ব্যথানাশক, যেমন NSAIDs, আর বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যা অনুযায়ী ঔষধ। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংস্থাগুলোর নির্দেশনা হল রোগে শুরুতে টানা ১৪ দিন নির্দিষ্ট কিছু ব্যথার ঔষধের ১টি সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করা, ১৪ দিনে কিছুটা উন্নতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধ চালিয়ে নেওয়া। আর ১৪ দিনে যদি কোন উন্নতি না হয়, তাহলে অন্য আরেকটি ব্যথার ঔষধ একই ভাবে ১৪ দিন ব্যবহার করা। ব্যথার ঔষধে কাজ হলে এক্ষেত্রে অন্যান্য দামী ঔষধ ব্যবহার না করাই উত্তম। পরবর্তীতে রোগের অবস্থা বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শমত ব্যথার ঔষধ বন্ধ করতে পারবেন। অন্যদিকে ব্যথার ঔষধে কাজ না হলে রোগের প্রক্রিয়াকে দাবিয়ে রাখার জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এমন ঔষধ ব্যবহার করা হয়, যেমন, Sulfasalazine, anti-TNF ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ ব্যাথার ঔষধ খেলে তো শুনেছি কিডনী নষ্ট হয়ে যায়!

ব্যাথার ঔষধে কিডনির কমনেস্ট যে সমস্যা হয়, তা হল একিউট ইন্টারস্টেশিয়াল নেফ্রাইটিস, আপনি ইন্টারনেট ঘাটলে দেখতে পাবেন যে ইন্টারস্টেশিয়াল নেফ্রাইটিস ব্যাথার ঔষধের জন্য যতটা না হয়, তার চেয়ে বেশি হয় বিভিন্ন এন্টিবায়োটিকের জন্য, এমন কি গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের জন্য। আর সমস্যা যার হয় তার প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই হয়। এবং এটি সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। আর সবাই কিডনির যে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে তা হল "সি. কে. ডি.", বাংলাদেশে যার নম্বর কারন গ্লোমেরিউলোনেফ্রাইটিস, নম্বর কারন ডায়বেটিস, নম্বর কারন উচ্চ রক্ত চাপ। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে ব্যাথার ঔষধ শতকরা মাত্র - ভাগ মানুষের কিডনির সমস্যা করে, কাজেই আপনি কি সেই ভাগের ভিতর পরবেন? নাকি বাকি ৯৭ ভাগের ভিতর পরবেন? তা আপনার ভাগ্য। তবে আপনি যদি সেই ভাগের ভিতর পরেও থাকেন তবুও ভয় পাওয়ার কারন নেই, কেননা আপনার কিডনির কোন সমস্যা হচ্ছে কি না তা লক্ষ্য রাখতে আমরা নিয়মিত আপনাকে কিডনির মার্কার করে ফলোআপে আসতে বলব।

আর কিডনি ছাড়াও এসকল ঔষুধে অন্ত্র, লিভারের সমস্যা হওয়া, রক্ত কমে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে; তাই আপনার ক্ষেত্রে কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তা নির্নয় করতে আপনাকে নিয়মিত ফলোআপে আসতে হবে। শুরুর দিকে সপ্তাহ পরপর, তারপর মাস পরপর, আর রোগের মাত্রা কমে গেলে ৩মাস পরপর ফলোআপে আসতে হবে। ফলোআপের সময় কিছু পরীক্ষা যেমন, রক্তের সিবিসি, কিডনির মার্কার, লিভারের মার্কার ইত্যাদি করে চিকিৎসককে রিপোর্ট দেখাতে হবে।

প্রশ্নঃ টিকা না কি নিতে হবে শুনলাম?

এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রন করতে আমরা যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এমন ঔষধ ব্যবহার করি তাহলে বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই সেক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত কিছু কমন সংক্রামক ব্যধির টিকা নিতে হবে।

প্রশ্নঃ ঔষধ খেলে কি সবসময় ভাল থাকব?

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঔষধ খাওয়া অবস্থায়ও রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধের মাত্রা পরিবর্তন করা লাগতে পারে


================================== RheumaLife =================================
=================================== iCarePG ===================================

No comments:

Post a Comment