রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
ডা: ইফতেখার হোসেন (বাঁধন)
প্রশ্নঃ রিউমাটয়েড
আরথ্রাইটিস কী?
উঃ এটা এক প্রকার বাত রোগ। সংক্ষেপে একে বলা হয় RA, যার
পূর্ণরূপ Rheumatoid Arthritis. এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতার সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি রোগ।
প্রশ্নঃ রোগটি কেন হয়?
আমাদের শরীরের নিজস্ব একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে, এর মূল
কাজ হল – শরীরকে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। কিন্তু এই রোগ প্রতিরোধ
ব্যবস্থা যখন অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে এবং নিজেই নিজের শরীরকে আক্রমণ করে বসে তখন
এ জাতীয় রোগ হয়। যেমন, ধরেন আপনি বাসায়
দারোয়ান রাখলেন আপনাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য,
কিন্তু
দারোয়ান যদি নিজেই আপনার সর্বনাশ করতে আরম্ভ করে, তাহলে যেই পরিস্থিতি হবে, এই রোগটা অনেকটা সেরকম।
প্রশ্নঃ এই রোগের উপসর্গ কী?
উঃ এ রোগের জন্য গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা হওয়া, বিশেষভাবে উভয় হাতের ছোট গিড়াসমূহ আক্রান্ত
হতে পারে। গিড়া ফুলে যেতে পারে, গিড়া বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি ফুসফুস, হৃদপিন্ড, রক্তকনিকা,
রক্তনালী, স্নায়ুকোষ এবং চোখও আক্রান্ত করতে
পারে।
প্রশ্নঃ রোগটা কি ভাল হবে?
উঃ আমাদের শরীরের কিছু কিছু রোগ আছে যা এক কোর্স ঔষধ খেলেই সম্পূর্ণ ভাল হয়ে
যায়, যেমনঃ নিউমোনিয়া, যক্ষা ইত্যাদি।
আবার কিছু কিছু রোগ আছে, যেমন ডায়বেটিস, উচ্চ
রক্তচাপ, ইত্যাদি, যা সবসময় ঔষধ খেয়ে
নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।
তেমনি এ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব নয়, তবে আপনার কষ্ট লাঘব করার জন্য এবং রোগটিকে
নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রশ্নঃ চিকিৎসা না নিলে কী হবে?
উঃ চিকিৎসা না নিলে এ রোগ মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, বিভিন্ন গিড়া
বাঁকা হয়ে অচল হয়ে যেতে পারেন।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে না হয় এ রোগ সুস্থ হওয়ার কোন চিকিৎসা নেই, বাইরে কোথাও গেলে কি লাভ
হবে?
উঃ পৃথিবীর কোথাও এ রোগ নিরাময়ের চিকিৎসা নেই, কোথাও এরূপ চিকিৎসা আবিষ্কার হলে অল্প সময়ের মধ্যেই তা
বাংলাদেশেও চলে আসবে।
প্রশ্নঃ এ রোগের জন্য কোন ডাক্তার দেখালে ভাল হবে?
উঃ এ রোগের চিকিৎসক হল রিউমাটোলজিস্ট, রিউমাটোলজী (Rheumatology) বিষয়ের উপর দক্ষতা
আছে এমন যে কোন ডাক্তার
আপনি দেখাতে পারেন।
প্রশ্নঃ রোগটির চিকিৎসা সম্পর্কে কিছু বলুন-
উঃ এ রোগের চিকিৎসার ২টি দিক আছে, এক - জীবন-যাত্রার কিছু
নিয়ম বা অভ্যাসের পরিবর্তন করা, দুই - ঔষধ সেবন।
নিয়মকানুনগুলো হলঃ
u ধুমপান
বাদ দিতে হবে
u নিয়মিত
ব্যায়াম করতে হবে
u কর্মব্যস্ত
জীবন যাপনের চেষ্টা করকে হবে
u মানসিকভাবে
প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করতে হবে
আর ঔষধকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায়, উপসর্গের চিকিৎসা এবং রোগের
প্রক্রিয়াকে দাবিয়ে রাখার চিকিৎসা। ব্যথার জন্য ব্যথানাশক (NSAIDs), স্টেরয়েড
(Steroid) দেওয়া লাগতে পারে। রোগের প্রক্রিয়াকে দাবিয়ে রাখার জন্য DMARDs
(যেমন, MTX, SSZ, leflunomide ইত্যাদি)
দেওয়া লাগতে পারে।
এ রোগে DPLD নামক ফুসফুসের রোগ হয়ে শ্বাসকষ্ট হতে
পারে, ভাস্কুলাইটিস বা রক্তনালীর প্রদাহ হয়ে শরীরে ঘা হতে পারে, এসব ক্ষেত্রে Steroid, Cyclophosphamide, MMF কিংবা
Rituximab দেওয়া লাগতে পারে।
প্রশ্নঃ ব্যাথার ঔষধ খেলে তো শুনেছি কিডনি নষ্ট হয়ে যায়!
উঃ ব্যাথার ঔষধে কিডনির যে সমস্যাটা হয়, তা হল একিউট ইন্টারস্টেশিয়াল নেফ্রাইটিস। কিন্তু ইন্টারস্টেশিয়াল
নেফ্রাইটিস ব্যাথার ঔষধের জন্য যতটা না হয়,
তার
চেয়ে বেশি হয় বিভিন্ন এন্টিবায়োটিকের জন্য,
এমন
কি গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের জন্য। আর এ অসুখটি সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
অন্যদিকে সবাই কিডনির যে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে তা হল "সি.
কে. ডি.", বাংলাদেশে যার ১
নম্বর কারন গ্লোমেরিউলোনেফ্রাইটিস,
২
নম্বর কারন ডায়বেটিস, ৩ নম্বর কারন
উচ্চ রক্ত চাপ। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে ব্যাথার ঔষধ শতকরা মাত্র ১-২ ভাগ মানুষের
কিডনির সমস্যা করে, কাজেই আপনি কি
সেই ২ ভাগের ভিতর পরবেন? নাকি বাকি ৯৮ ভাগের ভিতর
পরবেন? তা আপনার ভাগ্য। তবে
আপনি যদি সেই ২ ভাগের ভিতর পরেও থাকেন তবুও ভয় পাওয়ার কারন নেই, কেননা আপনার কিডনির কোন সমস্যা হচ্ছে কি না
তা লক্ষ্য রাখতে আমরা নিয়মিত আপনাকে কিডনির মার্কার করে ফলোআপে আসতে বলব।
সংক্ষেপে বললে: আপনি যদি চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ব্যথার ঔষধ খান, তাহলে আপনার ক্ষতি
হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। আর যদি ঘরে বসে নিজে নিজে বছরের পর বছর ব্যথার ঔষধ
খেতে থাকেন তাহলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
প্রশ্নঃ ঔষধ খেলে কি সবসময় ভাল থাকব?
উঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঔষধ খাওয়া অবস্থায়ও এ রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধের মাত্রা
পরিবর্তন করা লাগতে পারে।
প্রশ্নঃ এই রোগের রুগীদেরকে ডাক্তাররা ২-৩ মাস
পরপর ফলোআপে আসতে বলেন কেন?
উঃ ঔষধের জন্য কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
হয়- যেমন কিডনি, অন্ত্র, লিভারের সমস্যা হওয়া, রক্ত কমে যাওয়া ইত্যাদি। আপনার ক্ষেত্রে কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া
হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করতে এবং রোগের কারনে আপনার নতুন কোন সমস্যা হচ্ছে কনা তা নির্ণয় করতে আপনাকে নিয়মিত ফলোআপে আসতে হবে। শুরুর দিকে ২ সপ্তাহ
পরপর, তারপর ১
মাস পরপর, পরবর্তীতে ৩ মাস পরপর
ফলোআপে আসতে হবে। ফলোআপের সময় কিছু পরীক্ষা যেমন, রক্তের সিবিসি, কিডনির
মার্কার, লিভারের
মার্কার ইত্যাদি করে চিকিৎসককে রিপোর্ট দেখাতে হবে।
প্রশ্নঃ এই রোগের রুগীদেরকে ডাক্তাররা টিকা নিতে বলেন
কেন?
উঃ এই রোগে কিছু সংক্রামক ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়, তাছাড়া রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ
করতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এমন ঔষধ ব্যবহার করতে হয়, সেক্ষেত্রেও
সংক্রামক ব্যাধি হওয়ার আশঙ্কাটা বেড়ে যায়।
তাই নিয়মিত কিছু কমন সংক্রামক ব্যাধির টিকা নিতে হবে, যেমনঃ
o পাঁচ বছর পরপর
নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন
o প্রতিবছর
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিন
o হেপাটাইটিস বি ভ্যাক্সিন ইত্যাদি
প্রশ্নঃ এই রোগের রুগীরা কি বাচ্চা নিতে
পারবেন?
উঃ অবশ্যই নিতে পারবেন, তবে বাচ্চা নিতে চাইলে আগে চিকিৎসককে অবহিত করতে হবে। MTX জাতীয় ঔষধ চললে তা বাচ্চা নেওয়ার ৩ মাস আগে বন্ধ করতে হবে। গর্ভকালীন
সময়ে এ রোগের তীব্রতা কমে যেতে পারে, বেড়েও যেতে পারে,
আবার একই রকম থাকতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে SSZ এবং HCQ নিরাপদ ঔষধ।
--- ধন্যবাদ
---
=================================== iCarePG ===================================
Thanks.amar rog tar name hocche RA..
ReplyDeleteI want to know that, last kichu din dhore amar right hand er angul gulo khub betha kore and fule jai last kichu din rojai exercisena korai . Ami salazine continue kortechi.
tarporeo. So what should i do? Plz comment me.